ঢাকা,রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় এনজিও একলাবের জনসচেতনতা কর্মসূচীর নামে চলছে দাতা সংস্থার অর্থ হরিলুট!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::
কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়নে এনজিও একলাবের ‘তথ্য ও মতামত’ কেন্দ্রের আড়ালে জনসচেতনতা কর্মসূচী বাস্তবায়নের নামে চলছে দাতা সংস্থা ইউনিসেফের অর্থ হরিলুট! এমনটাই অভিযোগ করেছেন স্থাণীয়রা।

পেকুয়া উপজেলার উপকূলীয় ওই তিন ইউনিয়নে বিভিন্ন জনসচেতনতা কর্মসূচী বাস্তবায়নের নামে গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে নানান অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে আসলেও দাতা সংস্থা ইউনিসেফ অনিয়মে জড়িত এনজিও একলাবের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এনজিও একলাব কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী, মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিনের দায়িত্ব প্রাপ্ত সিইও (কমিউিনিটি এনগেজম্যান্ট অফিসার) এমএ মুসা নিজের ইচ্ছেমতো দায়সারাভাবে তথ্য ও মতামত কেন্দ্রে পরিচালনা করে আসছে। বিগত দেড় বছর ধরে মগনামা ইউনিয়নের বাজার পাড়া গ্রামে তথ্য ও মতামত কেন্দ্রের অফিস থাকলেও এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানেনা এলাকার কেউ।

তথ্য ও মতামত কেন্দ্রের কাগজে-কলমে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করলেও মাঠ পর্যায়ের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। একলাবের ওই প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নেওয়ায় এর সুফল পাচ্ছেনা মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালীর বাসিন্দারা। এসব ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ ওই প্রকল্প সম্পর্কেও জানেনা। তথ্য ও মতামত কেন্দ্রের কাজ ও উদেশ্যে সম্পর্কেও এলাকার কেউ জানেনা। এলাকাবাসীদের অন্ধকারে রেখেই অনেকটা ওই প্রকল্পের কাজ চলছে।

মগনামার বাসিন্দা রেজাউল করিম রেজা অভিযোগ করে এ প্রতিবেদককে জানান, দাতা সংস্থা ইউনিসেফের অর্থায়নে এনজিও একলাবের মাধ্যমে নানা অনিয়ম-দূর্নীতির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তথ্য ও মতামত কেন্দ্র এবং একলাবের ওই প্রকল্প সম্পর্কে মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালীর বেশিরভাগ জনগণ অবগত নহে। কাগজে-কলমে তথ্য ও মতামত কেন্দ্রের কার্যক্রম চলছে। কোন তথ্যই পাওয়া যায়না। কোন হালনাগাদ সরকারী বেসরকারী তথ্য নেই। জনসচেতনতা কর্মসূচী বাস্তবায়নের নামে মূলত দাতা সংস্থার অর্থ লুটেপুটে খাচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিইও আবু মুসা। তিনি আরো জানান, আবু মুসার কারণে মাঠ পর্যায়ে এনজিও একলাবের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে বিধায় তাকে অনিতিবিলম্বে ওই প্রকল্প থেকে অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত দেড় বছর ধরে পেকুয়া উপজেলার মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন মিটিং সভা ও কর্মশালার নামে বরাদ্দ নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সিইও মুসা বরাদ্দের সিংহভাগ ভূঁয়া বিল ভাউচার তৈরী করে আত্মসাৎ করছেন। তিন ইউনিয়ন পরিষদের মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের নিম্নমানের নাস্তা ও খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে। কিন্তু বিল ভাউচারে হিসাব দেখানো হয় উন্নত মানের নাস্তা ও খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে।

এছাড়াও গত ফেব্রুয়ারী মাসে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে কিশোর-কিশোরী বাচাই করে কর্মশালার আয়োজন করেছিল। তিন দিনের এসব কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের নিম্নমানের নাস্তা ও খাবার দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলাকালে বিভিন্ন জনসচেতনতা কর্মসূচী বাস্তবায়নের নামেও দাতা সংস্থা ইউনিসেফের অর্থ লুটে নিয়ে নিয়েছে আবু মুসা। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই প্রকল্পে লোক নিয়োগ করা হয়নি। আবু মূসা নামের ওই ব্যক্তি স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে প্রতি ইউনিয়নে ৬ জন করে ভলান্টিয়ার নিয়োগ করেছে। এরমধ্যে উজানটিয়া ইউনিয়নের তিনজন ভলান্টিয়ারকে সম্প্রতি বিনা নোটিশে চাকুরীচ্যুত করেছে আবু মূসা। এ তিনজনেক চাকুরীচ্যুত করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই উজানটিয়া ইউনিয়নের ফের দুইজন ভলান্টিয়ারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এভাবে আরো বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে দায়সারা জনসচেতানমূলক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছেন একলাবের তথ্য ও মতামত কেন্দ্র।

প্রসঙ্গত: দাতা সংস্থা ইউনিসেফের অর্থায়নে এনজিও একলাব পেকুয়া উপজেলার মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়নে গত দেড় বছর পূর্বে মগনামার বাজার পাড়া গ্রামে তথ্য মতামত কেন্দ্র চালু করে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে ওই তিন ইউনিয়নের জনগণকে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জনগণকে তথ্য সরবরাহ ও বিভিন্ন জনসচেতনতা কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করে। কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা অনিয়ম-দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় ওই তিন ইউনিয়নের জনগণ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে দাতা সংস্থা ইউনিসেফ কর্তৃক বরাদ্দের টাকাও দেদারসে হরিলুট হয়েছে।

এসব অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হয় এনজিও একলাবের তথ্য ও মতামত কেন্দ্রের পেকুয়ায় কর্মরত সিইও এম এ মুসার সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, সম্প্রতি দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে তথ্য ও মতামত কেন্দ্র থেকে তিন জন ভলান্টিয়ারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তারাই মূলত অনিয়মের অভিযোগ এনে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তিনি অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িত নন বলেও এ প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেছেন।

পাঠকের মতামত: